একটি বীজ মন্ত্র (সংস্কৃত: बीज मन्त्र) ধ্যান বা যোগ অনুশীলনে ব্যবহৃত এক-অক্ষর শব্দ। সংস্কৃত বাক্যাংশ বীজ মন্ত্রের সরাসরি অর্থ, " বীজ মন্ত্র "
বীজমন্ত্র দু'ধরনের হয়। "ওঁ" দিয়ে যে বীজের শুরু সেগুলো ব্রহ্মবীজ আর "হ্রীং" দিয়ে যে বীজগুলো আরম্ভ ওগুলো মায়াবীজ।
বীজমন্ত্র উচ্চারণ করে গেলেই শুধু হবে না, গুরু যদি সেই বীজের কার্যক্রম আর মানেগুলো বলে না দেন, তাহলে পাখিপড়া বুলির মতন শুধু বীজ জপই চলবে। চলবে আচমন, ক্রিয়া, পুজো। কিন্তু বীজ কোনওরকম কোনও কাজ করবে না।
গুরু বীজ জাগিয়ে শিষ্যকে দেন। একে বলা হয়, কুঞ্জি দেওয়া। কুঞ্জি হল, চাবির গোছা। শিষ্যের দেহটা চাবি মারা থাকে। গুরু কুঞ্জি দিয়ে তালাটা খুলে দেন। বীজের ভেতরও একইরকম তালা থাকে। যে গুরু বীজ জাগানোর প্রক্রিয়া না - করেই শুধুই মন্ত্র দিয়ে খালাস, সে মন্ত্রের লক্ষ জপেও কোনও ফল নেই। মন্ত্র কাজ করবে না।
সেজন্যই অধিকারী নিরিখে বীজের বিভাজন আছে। পুরুষ বীজমন্ত্র, স্ত্রীবীজমন্ত্র আর নপুংসক বীজমন্ত্র -- এই তিন ধরনের বীজ আছে।
"ইত্থং মাতা বিদ্যা চক্রং স্বগুরুঃ স্বয়ঞ্চেতি"।
"পঞ্চানামপি ভেদাভাবো মন্ত্রস্য কৌলিকার্থোহয়ম্।।
অর্থাৎ : প্রমাতা (শিব), ইষ্টদেবতা, তাঁর চক্র (মন্ত্র ইত্যাদি) গুরু এবং সাধক এই পাঁচের ভেদাভাব অর্থাৎ অভেদই মন্ত্রের গূঢ়ার্থ।
মন্ত্রজপে সিদ্ধিলাভ করতে হলে মন্ত্রচৈতন্য করে এবং মস্ত্রার্থ পরিজ্ঞাত হয়েই যথাবিধি জপ করতে হয়। কেননা, মন্ত্রসিদ্ধি লাভ করতে হলে, মন্ত্র যে অক্ষরে, যে ভাবে, যে ছন্দোবন্ধে গ্রথিত আছে, তা সেভাবে জপ করতে হয়। তবেই মন্ত্রে সিদ্ধিলাভ করা যাবে। তাই কুলার্ণবতন্ত্রে বলা হয়েছে–
মনোহন্যত্র শিবোহন্যত্র শক্তিরন্যত্র মারুতঃ।
ন সিধ্যন্তি বরারোহে কল্পকোটিশতৈরপি।। (কুলার্ণবতন্ত্র)
অর্থাৎ : মন্ত্রজপকালে মন, পরম-শিব, শক্তি এবং বায়ু পৃথক পৃথক স্থানে থাকিলে অর্থাৎ ইহাদিগের একত্র সংযোগ না হইলে শতকল্পেও মন্ত্রসিদ্ধি হয় না। সরস্বতীতন্ত্রের ষষ্ঠ পটলে জগৎগুরু যোগেশ্বর মহাদেব বলছেন–
অন্ধকারগৃহে যদ্বৎ ন কিঞ্চিৎ প্রতিভাসতে।
দীপনীরহিতো মন্ত্রস্তথৈব পরিকীর্তিতঃ।।- (সরস্বতীতন্ত্র-৬/৪)
অর্থাৎ : আলোহীন অন্ধকাাচ্ছন্ন গৃহমধ্যে যেমন কোন বস্তুই প্রতিভাসিত হয় না বা দেখা যায় না, সেইরূপ দীপনীহীন মন্ত্রও তত্ত্বপ্রকাশনে সমর্থ হয় না ফলে মন্ত্রজপে কোন ফল হয় না, এমত কথিত হইয়াছে।
এখন মন্ত্রার্থ কী, তা জানা যাক। তন্ত্রমতে মন্ত্র ও দেবতার অভেদজ্ঞানই মন্ত্রার্থ। মন্ত্রার্থ মানে শব্দার্থ নয়। মন্ত্রের ভাবার্থ উপলব্ধি করা শিখতে হবে, এবং তা সাধনসাপেক্ষ। মন্ত্রার্থ প্রসঙ্গে রুদ্রযামলে বলা হয়েছে–
মন্ত্রার্থ-দেবতারূপ-চিন্তনং পরমেশ্বরি।
বাচ্যবাচকভাবেন অভেদো মন্ত্রদেবয়োঃ।।- (রুদ্রযামল)
অর্থাৎ : ইষ্টদেবতার মূর্তি চিন্তা করিলে অর্থাৎ দেবতার শরীর ও মন্ত্র অভিন্ন এইরূপ ভাবিলে মন্ত্রার্থ ভাবনা হয়। দেবতার রূপচিন্তনই মন্ত্রার্থ। মন্ত্র ও দেবতা বাচ্য-বাচক ভাবে অভিন্ন।
সকল মন্ত্রেই দুইটি শক্তি নিহিত থাকে। একটি বাচ্য শক্তি, অপরটি বাচক শক্তি। মন্ত্রের প্রতিপাদ্য দেবতাই মন্ত্রনিষ্ঠ বাচ্য শক্তি এবং মন্ত্রময়ী দেবতাই বাচক শক্তি। বীজ যেরূপ ফলের অন্তরেই নিহিত থাকে, বাচ্য শক্তিও সেইরূপ বাচক শক্তির অন্তর্নিহিত। ফলের বহিরাবরণ ভেদ না করিলে অভ্যন্তরের বীজকে লক্ষ্য করা যায় না, সেইভাবে বাচক শক্তির আরাধনা না করিলে বাচ্য শক্তির স্বরূপ জানিতে পারা যায় না। বাচ্য শক্তির সামর্থ্যে মন্ত্র জীবিত থাকে এবং বাচক শক্তির সামর্থ্যে রক্ষিত হয়। সুতরাং এই উভয় শক্তির একটিকেও বাদ দিবার উপায় নাই। একটিকে বাদ দিলেই মন্ত্র নিবীর্য হইয়া যাইবে। মন্ত্রকে অক্ষর-রূপে মনে না করিবার আরও হেতু আছে। অক্ষরাত্মক মন্ত্র শব্দব্রহ্মের প্রতীক মাত্র----অক্ষরজ্ঞান-রূপ সংবিদের অধিষ্ঠাতা স্বয়ং মহেশ্বর। শব্দ এবং অক্ষরসমূহ তাঁহারই শক্তি। তাঁহাতে অনন্ত শক্তি-বৈচিত্র্যের উদয় এবং লয় হইতেছে। আর অক্ষরসমূহের মধ্যে তদীয় শক্তিত্ব-রূপ একই সাধারণ ধর্ম আছে বলিয়া প্রতীক-রূপ অক্ষরসমূহেরও আত্যন্তিক ভেদ নাই। এই দৃষ্টিতে বিচার করিলে বোঝা যায়– প্রণবাদি সকল বীজ মন্ত্রই তাঁহার বাচক। শক্তি ও শক্তিমানের মধ্যে আত্যন্তিক ভেদ স্বীকৃত হয় নাই।’
মন্ত্রে দেবতা মন্ত্রবাচ্যা এবং মন্ত্র দেবতার বাচক, সুতরাং বাচ্য বিজ্ঞাত হলে বাচক প্রসন্ন হন। এভাবে মন্ত্রের অর্থ পরিজ্ঞাত হয়ে জপ না করলে মন্ত্রসিদ্ধি হয় না। তাই সবারই আপন আপন ইষ্টদেবতার, আপন আপন মন্ত্রের অর্থজ্ঞান থাকা আবশ্যক। শাস্ত্রে মন্ত্রার্থজ্ঞানের এক উৎকৃষ্ট উপায় লিখিত আছে। সে উপায়ে সবাই সকল প্রকার মন্ত্রার্থ পরিজ্ঞাত হতে পারেন। তার দ্বারা মন্ত্রের অর্থ আপনিই সাধক-হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
শৈব মন্ত্র, শক্তি মন্ত্র, বিষ্ণুমন্ত্র,গণেশ মন্ত্র, সূর্য মন্ত্র বা যে কোন দেবদেবীর বীজমন্ত্রের দীক্ষা এ সব তন্ত্র শাস্ত্রেরই অন্তর্গত তবে বেদের সূর্য গায়ত্রী মন্ত্র বৈদিক মন্ত্র । তন্ত্রোক্ত বীজমন্ত্রের দীক্ষা+ বীজগায়ত্রী ছাড়া ব্রহ্মজ্ঞান এর পথে সাধনের উন্নতি করা সম্ভব নয় —----তর্ক- যুক্তিতে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করা যায় না। তাই বৈদিক ধর্মআচার-অনুশাসন এর সঙ্গে তন্ত্রোক্ত দীক্ষা ও সাধনা এবং বৈদিক ব্রহ্মবিদ্যার কঠোর যোগ সাধনার দ্বারাই ব্রহ্ম-জ্ঞানের বিকাশ হয়। ব্রহ্ম-জ্ঞান লাভ করার জন্যে তন্ত্র এবং বৈদিক–এই দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে মানসিক ও আধ্যাত্মিক ধর্মআচার-অনুশাসন এবং সাধনার প্রয়োজন। তাই তন্ত্র বাদ দিয়ে শুধু বৈদিক অথবা বৈদিক বাদ দিয়ে শুধু তন্ত্র সাধনায় পূর্ণব্রহ্ম জ্ঞানলাভ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয় । তাই তন্ত্র + বৈদিক ধর্মআচার-অনুশাসন এবং সাধনার –এই দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে পূর্ণব্রহ্ম জ্ঞানলাভ করা কারো পক্ষে সম্ভব ।
(বলা বাহুল্য যে তন্ত্রের আভিচারিক দিক সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করিয়া শুধু শুদ্ধ-দিব্য শৈব্যাগমতন্ত্রের বীজ+ গায়ত্রী এবং সাধনা অত্যন্ত আবশ্যক)
***********************************************
সৎগুরু এর নিকটে "মূলদীক্ষা / ব্রহ্মদীক্ষা" প্রাপ্তির পর কি কি লাভ হয় ?
উত্তর :-
1.কুলকুণ্ডলিনী মহাশক্তি জাগরণ ঘটে
2.ইষ্টমন্ত্র রুপি জন্ম- জন্মের বীজমন্ত্র লাভ হয়
3.গায়িত্রী মন্ত্র লাভ হয়
4.আত্মক্রিয়া বিদ্যা লাভ হয়
5.অনাহতধ্বনি লাভ হয়
6.অজপা লাভ হয়
7. আত্মসূর্যর দর্শন লাভ হয়
8. দিব্যচুক্ষুলাভ বা দিব্যদৃষ্টির এর উপর 16 এর মধ্যে 15 টা আবরণ উন্মোচন হয়
9. ব্রহ্মবিদ্যা লাভ হয়
10.মূলাধার থেকে সাহস্রার " পর্যন্ত সমস্থ সুষুন্মাতে ব্রহ্মবিদ্যা সর্বদা এর জন্যে প্রতিষ্টিত হওয়া যায়
11.পরম মোক্ষ এর পথ লাভ হয়
12 গুরু নিজের সঙ্গে শিষ্যকে যুক্ত করে - মোক্ষ পর্যন্ত গুরুর সঙ্গে করুনা সম্পক লাভ হয়
13. দীক্ষার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিজত্ব প্রাপ্তি হয়
14. "কারণশরীর" জাগ্রত হওয়া শুরু হয়ে যায়
15. "সুক্ষশরীর বা প্রেতশরীর " দগ্ধ হওয়া শুরু হয়ে যায়
16. অমাকলা-চন্দ্রাসুধা লেভার পথ খুলে যায়
17. "সঞ্চিতকর্ম " দগ্ধ হওয়া শুরু হয়ে যায়
18. "আরাধ্হকর্ম" এর পথ চিরতরে বন্ধ হওয়া শুরু হয়ে যায়
19. জন্ম- জন্মের কে আমার "ইস্ট" ও " লক্ষ্য" - সেটা চিনতে বা জানতে পারা যায়
20 সদা-সর্বদা জন্যে আমার "ইস্ট " আমার সগেই আছেন এটা অনুভব করা যায়
21. চিন্তার চপলতা ও দিক্ভ্রষ্টতা দূর হয়ে এক সুষম ধারা ও দিক তৈরি হয়
22. গুরুশক্তির প্রভাবে ধর্মে প্রকৃত দৃঢ়তা তৈরি হয়
23. গুরু শক্তির সুরক্ষা তৈরি সবদিক দিয়ে
24. গুরুর কৃপা দৃষ্টি লাভ হয়
উপরুক্ত এই 24 প্রকার এর পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়-- 32 লক্ষণ সম্পন্ন মহান সৎগুরু -মহাপুরুষ এর নিকটে "মূলদীক্ষা / ব্রহ্মদীক্ষা" হওয়া সঙ্গে সঙ্গেই l
তাহলে আমাদের প্রত্যেকের চিন্তা করা উচিত যে ---
১.যিনি নিজে মুক্তি লাভ করেন নি --তিনি কি করে মুক্তির পথ দেখবেন ???
২. যার নিজের কুণ্ডলী জাগ্রত হয় নি তিনি কি ভাবে অপরের কুণ্ডলী জাগ্রত করবেন ???
৩.যার নিজের দিব্যদৃষ্টি লাভ হয় নি তিনি কি ভাবে অপরের দিব্যচক্ষু এর আবরণ দূর করবেন ???
৪.যার নিজের চিন্তার চপলতা ও দিক্ভ্রষ্টতা দূর হয় নি , সে অপরের চিন্তার চপলতা ও দিক্ভ্রষ্টতা দূর কি ভাবে করবেন ???
৫.যার নিজের মূলাধার থেকে সাহস্রার " পর্যন্ত সমস্থ সুষুন্মাতে ব্রহ্মবিদ্যা সর্বদা এর জন্যে প্রতিষ্টিত হন নি তিনি অপরের কিভাবে করবেন ???
৬. যার নিজের আত্মসূর্যর দর্শন লাভ হয় নি ,,, সে কিভাবে অপরকে আত্মসূর্যর দর্শন লাভ কি ভাবে করবেন ???
৭. যার নিজের আত্মক্রিয়া বিদ্যা লাভ হয় নি তিনি কিভাবে অপরকে আত্মবিদ্দ্যা দিবেন ???
তাই শাস্ত্র থেকে জানুন , যার এই গুলো নিজের লাভ হয় নি সে কিভাবে সমাজের মধ্যে কিছু ধর্মপ্রাণলোককে ধর্মের নাম প্রতারণা করছে ????
তাই বৈদিক প্রকৃত শাস্ত্র জ্ঞান লাভ করে নিজেকে আত্মউন্নতির পথে নিয়ে চলুন যার নিজেকে ধর্মের গ্লানি থেকে , প্রতারণা থেকে দূরে রাখুন l
শ্রাদ্ধঅন্ন ভোজন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন...... “বেদোক্তঃ পরম ধর্মঃ—--- সম্প্রীতি ভোজ্যানি আপদা ভোজ্যানি বা পুনৈঃ।। “ অনুবাদ:- "বৈদিক শাস্ত্র ধর্মঃ অনুশাসন অনুসারে —-যে খাওয়াচ্ছে আর যে খাচ্ছে—-- এই দুজনেরই যদি মন ধার্মিক ভাবাপন্ন ভাবে প্রসন্ন থাকে, তাহলেই ভোজন করা উচিত, নচেৎ ভোজন করা উচিত নয়।” কিন্তু যিনি খাওয়াচ্ছেন আর যিনি খাচ্ছেন, তাদের মনে যদি ব্যথা বেদনা থাকে, সেই পরিস্থিতিতে কক্ষনো ভোজন গ্রহণ করা উচিত নয়।" মহাভারতে, অনুশাসন পর্বে লেখা আছে, মৃত্যুভোজ / শ্রাদ্ধঅন্ন ভোজ কর্মচঞ্চলতা কমিয়ে কায়-মনো-বুদ্ধি-জ্ঞান-ধর্ম-বাক্যে বা এককথায় সর্বদিক দিয়ে প্রৌঢ়ত্ব প্রদান করে / শুভশক্তি নষ্ট করে এবং কায়-মনো-বুদ্ধি-জ্ঞান-ধর্ম-বাক্যে বা এককথায় সর্বদিক দিয়ে অশুভশক্তি বৃদ্ধি করে। যে পরিবার মৃত্যু নামক বিপদের সম্মুখীন, সেই প্রবল বিপত্তির সময় সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ান, শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাদের সবরকম সাহায্য করুন কিন্তু 11/13/15/30 দিনে শ্রাদ্ধদিবসে শ্রাদ্ধবাড়ির শ্রাদ্ধভোজ পরিত্যাগ করুন। কারোর মৃত্যু হলে তার সন্তান সন্ততিরা অসৌজ পালন করার পর আত্মার শান্তি কামনা করার জন্য শ্রাদ্ধ শান্তি করে। তারপর আত্মীয় স্বজনদের নিমন্ত্রন করে খাওয়ায়। কিন্তু হিন্দু পুরাণ মতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের খাবার খাওয়া পাপ এবং একে প্রেত-ভোজন বলে। । কায়-মনো-বাক্যে অথবা সর্বদিক দিয়ে বহিষ্কার করুন বৈদিক শাস্ত্র বিরুদ্ধ এই কুরীতির। মৃত্যুভোজ / শ্রাদ্ধঅন্ন ভোজ এর কুফল:----- 1.কায়-মনো-বুদ্ধি-জ্ঞান-ধর্ম-বাক্যে বা এককথায় সর্বদিক দিয়ে প্রৌঢ়ত্ব প্রদান করে / শুভশক্তি নষ্ট করে । 2. কায়-মনো-বুদ্ধি-জ্ঞান-ধর্ম-বাক্যে বা এককথায় সর্বদিক দিয়ে অশুভশক্তি বৃদ্ধি করে। 3. ধর্ম-অধর্ম, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্য, বিবেক-অবিবেক, জ্ঞান-অজ্ঞান, কর্তব্য-অকর্তব্য, কর্ম-অকর্ম ইত্যাদি সমস্ত বিচারবুদ্ধি বিলোপ করে । শারীরিক বহুপ্রকার রোগব্যাধির হয় । 4. বহু বছরের সাধনা-জপ-তপ-ব্রত-পূজা রুপি যে পুণ্য বা ধর্মরুপি কর্মফল সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে । 5. শাস্ত্র, গুরু , ঈশ্বরের প্রতি অন্তরের স্থিত শ্রদ্ধাকে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ার মতন বহুবিধ উপায় কমিয়ে দেয় । 6. তীর্থ দর্শন এর যে পূর্ণ বা ধর্ম তারও ফল কে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে । 7 .শ্রাদ্ধ অন্ন যে কোন উপায় মানুষের পেটে প্রবেশ করলে সর্বদা সাধনার রাস্তায় বিঘ্ন-বাধা উৎপত্তি করে থাকে । 8. বাস্তবিক জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ।এই শ্রাদ্ধঅন্ন খেলে মানুষ মতিভ্রম হয়ে অনেক পাপ কাজও করে । 9. গুরু প্রদত্ত উপদেশ / শাস্ত্র থেকে উপার্জিত জ্ঞান স্মৃতি থেকে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে । 10. মানুষের মনুষ্যত্ব চরিত্রকে কখনো স্থির চরিত্র হতে দেয় না সর্বদায় চরিত্রহীনের পথে নিয়ে যায় । 11. এই শ্রাদ্ধঅন্ন মনের ভক্তি ভাবকে নষ্ট করে দেয়। দীক্ষা নিলে শ্রাদ্ধ বাড়িতে খাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
মনুষ্যত্ব শিক্ষা পূর্ণ মাত্রায় লাভ করার জন্য সর্বজনীনভাবে আপনি স্বাধীন। মনুষ্যত্ব শিক্ষা পূর্ণ মাত্রায় লাভ করার জন্য যখন আপনি আপনার হৃদয় থেকে প্রকৃতপক্ষে আকুলতা অনুভব করবেন তখন ঈশ্বর মূল কৃপা যা করেন তা হল প্রত্যেক মনুষ্যত্ব শিক্ষা সংস্কৃতিতে " প্রকৃত সৎ, ধার্মিক ও জ্ঞানী উপদেশ দাতার" সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বা যুক্ত করিয়ে দেন,................. বাকি প্রত্যেককে উপদেশ দাতার উপদেশ পূর্ণরূপে কায়মনোবাক্যে নিজ সীমা পরিসীমার মধ্যে সততার সঙ্গে পালন করা উচিত…..তবেই আপনি মনুষ্যত্ব শিক্ষার পূর্ণমাত্রা অবস্থা অর্থাৎ পরম জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হবেন
দীক্ষা :- গুরুর দেওয়া উপদেশগুলির এর সঙ্গে নিত্য-অনিত্য বিবেকবিচার এবং শাস্ত্রের 42 বৈদিক অনুশাসন বাস্তবিক জীবনে কায়-মন-বাক্যে 100% প্রতিপালন এবং করনীয় কর্তব্য কর্মের সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে করতে নামদীক্ষা এবং বীজদীক্ষা ও গায়ত্রীদীক্ষা তৎপরে পশুভাব সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হইলে যোগদীক্ষা এবং যোগদীক্ষার সাধনা করতে করতে সাধনার উত্তমস্তরে এলে ব্রহ্মবিদ্যাদীক্ষা লাভ হয় । এই সমস্ত দীক্ষার স্তর গুলি ক্রমান্বয়ে যোগ্যতা অনুসারে প্রাপ্ত করাকে বৈদিক মতে দীক্ষা প্রাপ্তি বলে । তবে বিশেষ বক্তব্য যে গুরু উপদেশ এর সঙ্গে সঙ্গে নামদীক্ষা এবং বীজদীক্ষা ও গায়ত্রীদীক্ষা প্রাপ্তি অতি প্রয়োজন কারণ এগুলি প্রাপ্ত না হলে কেউ গুরু সঙ্গে আন্তরিক ভাবে যুক্ত হতে পারেনা , তাই সাধনার প্রাথমিক স্তরে অনুশাসন এবং উপদেশ স্তরেও এই দুধরনের দীক্ষা অত্যন্ত আবশ্যক , আরো কারণ হইলো যে দীক্ষা ব্যতীত শাস্ত্রীয় কোন কর্মের অধিকার কেউ প্রাপ্ত হয় না সেই কারণে গুরুকরণ এবং দীক্ষার অধিকার আবশ্যকতার কথা শাস্ত্রে বারবার বলা হয়েছে– যাহাকে শাস্ত্রে অষ্টাঙ্গিক মার্গের পঞ্চমমার্গ “ দীক্ষামার্গ” বলা হয়।