হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মন্দার পর্বত ( ভারতীয় সনাতন বিজ্ঞানে শাস্ত্রগত নাম)। মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কর মধ্যবর্তী শ্বেত ও শীতল প্রদেশই হলো হিমালয়। ব্রহ্ম নাড়ীর একাংশ মস্তিষ্কস্থিত শিব পিণ্ড হতে মূলাধর পর্যন্ত ব্যাপ্ত ( এগুলি কেবল জানবার জন্য বিনা গুরু বা আচার্য ছাড়া কেও প্র্যাকটিস করতে যাবেন না, জীবন নিয়ে খেলবেন না)। অন্য অংশ কে শক্তি নাড়ী নামে অভিহিত করা হয়। এই উভয় নাড়ী বৃহৎ মস্তিষ্কের উপরে অবস্থিত। মন্দার পর্বত এত শক্তিশালী উপাদানে প্রস্তুত যে দেবাসুরের টানাটানিতেও এই পর্বতের কোন ক্ষতি হয় নাই। ব্রহ্ম নাড়ী হল সমুদ্র মন্থনের রশি ( দড়ি) অনন্ত নাগ। ঊর্ধ্ব মস্তিষ্কে স্থিত শক্তি নাড়ী হল মন্দার পর্বতের চূড়া। সাধক মস্তিষ্কস্থিত শক্তি নাড়ীর সন্ধান পেলে তার জীবন শক্তি তত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অমোঘ শক্তির অধিকারী হন এবং তিনি হয় রাজযোগী অথবা রাজগুরু অথবা রাজাধিরাজ চক্রবর্তী সম্রাট তার সংস্পর্শে দেশ, জাতী, সমাজ জীবন থেকে দুর্বল ও অসুরবাদের ধ্বংস হয় এবং ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকে।
অসুরগণকে পরাজয় করবার পর দেবতাদের অহংকার হল যে এই বিজয় তাদের। সেই সময় এক জ্যোতি তাদের নিকট দর্শন দিলেন বেদ একে " ব্রহ্মের আবির্ভাব" নামে বর্ণনা করেছেন। যাকে দেবতাগণ অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারলেন না। সেই সময় সেই স্থানে এক " শক্তিমূর্তি" আবির্ভূতা হলেন এবং দেবতাদের সাথে সেই শক্তিমূর্তির কথোপকথন হল। বেদ সেই শক্তিমূর্তির নাম—" হৈমবতী” বলেছেন।
মেরুদণ্ডের মধ্যস্থিত সুষুম্নার মধ্যে সুশীতল হিমপ্রদেশ রয়েছে। ব্রহ্ম নাড়ী এই প্রদেশে অবস্থান করেন। এই হিমপ্রদেশস্থিত ব্রহ্ম নাড়ীর সগুণ অবস্থায় হল— " হৈমবতী"। ব্রহ্ম নির্গুণ, তাই দেবতাগণ তাকে জানতে পারেনি। " হৈমবতী" সগুণ, তাই তাকে জানা যায়। ষট্ চক্রে কুণ্ডলিনী জাগরণ, সুষুম্না, বজ্রা, চিত্রিনী ইত্যাদি প্রধান নাড়ীগণ রয়েছেন, যা অত্যন্ত গোপনীয় গুরুগম্য বিষয়। এসব অন্ত যোগপথে সাধক/ সাধিকা মাত্রকেই সাধনা করতে হয়। এই সব মর্ম ও গ্রন্থি ভেদ করবার পর ব্রহ্ম নাড়ীর আশ্রয় পাওয়া যায়। এটাই হল যোগ ও ব্রহ্মবিদ্যার শ্রেষ্ঠ সাধনা। " হৈমবতী" দেবতাগণকে বুঝিয়েছিলেন যে তোমরা এ বিজয়ে অহংকার করো না, অসুরবাদের বিরুদ্ধে বিজয় ব্রহ্মেরই সনাতন নিয়ম। তোমরা সেই নিয়ম বুঝে বিশ্বের কল্যাণ কর। এই নিয়মের অনুকূল হয়ে কর্ম করায় হলো— 'কর্মযোগ'।
কর্ম সকলকেই করতে হয়। দুর্বলবাদী এবং অসুরবাদীরাও কর্ম করেন, কিন্তু সেটাকে কর্ম যোগ বলা যায় না সেই সমস্ত কর্মকে দুষ্কর্ম অনুষ্ঠান বলা হয়।
শুধু চক্র মর্মভেদ করে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করা যোগ নয় সেই ব্রহ্মজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করা, ধর্ম ও সমাজকে রক্ষা করা, সৃষ্টির কল্যাণ সাধনে উত্তরোত্তর শ্রী বৃদ্ধিতে পালনে যুক্ত থাকা এবং অসুর ও দুর্বলবাদকে ধ্বংস করা কে যোগ বলা হয়।
শ্রীমৎ ভাগবত গীতা তে এইরূপ যোগই 'কর্মযোগ' নামে স্থান পেয়েছে।