একাদশ রুদ্র অবতার
অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেবতাদের সাহায্য করার জন্য শিব এগারো রুদ্রের রূপ ধারণ করেছিলেন।
রুদ্ররা ঋষি কশ্যপের স্ত্রী সুরভীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারা তাদের প্রবল বীরত্বের মাধ্যমে অসুরদের পরাজিত করেছিলেন।
একাদশ রুদ্র অবতার
শিব পুরাণ অনুসারে, দেবতা অসুর দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর দেবতাদের অসুররা তাড়িয়ে দেয়। আর কোন উপায় না পেয়ে, দেবতারা ঋষি কশ্যপের কাছে যান এবং তাঁর কাছে সমাধান চান। দেবতাদের অবস্থা দেখে, কশ্যপ শিবের নগরী কাশীতে যান এবং মহা তপস্যা করেন। তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে, শিব কশ্যপের সামনে আবির্ভূত হন এবং তাঁকে বর প্রদান করেন। এরপর ঋষি শিবের কাছে তাঁর পুত্ররূপে অবতারিত হয়ে এবং অসুরদের যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে দেবতাদের সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেন। শিব সম্মত হন এবং একাদশ রুদ্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন।
নাম গুলি হল- 1) কপালি 2) পিঙ্গল 3) ভীম 4)বিরূপাক্ষ 5) বিলোহিতা 6) শাস্ত্র 7) অজপদ 8. অহিরবুধন্য 9) শম্ভু 10)চাঁদ এবং 11) ভব।
ভব রূপে শিব মহাসৃষ্টির উৎস, যিনি জগতের সমস্ত কিছু ধারণ করেন।
ভক্তিমূলক দৃষ্টিকোণ: 11 রুদ্র মানেই 11 শক্তির প্রকাশ — কখনো উগ্র, কখনো শান্ত, কিন্তু সবই এক শিবেরই রূপ।
একাদশ রুদ্রদের আলোচনা
1. কপালি
অর্থ: যার হাতে,গলায় মাথার খুলি থাকে।
রূপ: উগ্র ও তপস্বী রূপে পরিচিত।
প্রতীক: মৃত্যু, ধ্বংস, ত্যাগ ও তন্ত্রশক্তির প্রতীক।
বিশেষত্ব: এই রূপে শিব চিতায় বসে থাকেন, যা আত্মজ্ঞান ও অহংকার বিলয়ের সংকেত।
2. পিঙ্গল
অর্থ: পিঙ্গল মানে হালকা লালাভ বা তাম্রবর্ণ।
রূপ: উজ্জ্বল চোখ, তেজে দীপ্ত।
প্রতীক: আগুন, সত্ত্বিক ও রজোগুণের মিশ্রণ।
শিবের এই রূপ উগ্র অসুরদের দহন করেন।
3. ভীম
অর্থ: ভয়ংকর, শক্তিশালী, দুর্দান্ত।
রূপ: অদম্য বীর, অদৃষ্ট অসুরনাশক।
প্রতীক: প্রবল বল, অপ্রতিরোধ্য শক্তি।
ভীম রূপে রুদ্র অসুরদের শক্ত কৌশলে পরাজিত করেন।
4. বিরূপাক্ষ
অর্থ: যার চোখ স্বাভাবিক নয় – বহুমাত্রিক চক্ষু।
রূপ: অলৌকিক চক্ষুর অধিকারী, সর্বজ্ঞ রূপ।
প্রতীক: অন্তর্দৃষ্টি, সবকিছু দেখা ও বোঝার শক্তি।
বিরূপাক্ষ এমন রূপ, যা প্রকৃত দর্শনের প্রতীক – মায়া ভেদ করে সত্য দেখা।
5. বিলোহিত
অর্থ: লালাভ বা রক্তবর্ণ, অগ্নিময় রূপ।
রূপ: আগ্নেয় ও ধ্বংসকামী, ভয়ংকর উগ্র রূপ।
প্রতীক: রক্ত, যুদ্ধ, উচ্ছেদ।
6. শাস্ত্র
অর্থ: শাসনকারী, নিয়মনিষ্ঠ রূপ।
রূপ: যিনি ধর্ম ও শৃঙ্খলা রক্ষা করেন।
প্রতীক: ন্যায়বিচার ও শাস্ত্রীয় বিধান।
শিব এই রূপে ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং ভ্রষ্ট রাজাদের দমন করেন।
বৈদিক সংযোগ: "শাস্ত্র" রূপেই তিনি আইন বা ধর্মশাস্ত্রের ধারক।
7. অজপাদ
অর্থ: যে নিজের গন্তব্যে নিরন্তর অগ্রসর হন।
রূপ: নিরলস, নিরবিচারে কর্মশীল রূপ।
প্রতীক: কৌশল, অবিচল সাধনা।
8. অহিরবুধন্য
অর্থ: সমুদ্রগর্ভের সাপ বা নাগদেবতা; শক্তির আধার।
রূপ: সর্পরূপ শক্তির ধারক, অতল গহ্বরের প্রভু।
প্রতীক: গুপ্ত শক্তি, তন্ত্র বিদ্যা, কুণ্ডলিনী।
এই রূপে রুদ্র নিচুস্তরের অসুর ও তামসিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
রিগ্বেদেও এই রূপের উল্লেখ আছে।
9. শম্ভু
অর্থ: কল্যাণকামী, মঙ্গলময় রূপ।
রূপ: শান্ত, সদাশয়, আশ্রয়দাতা রূপ।
প্রতীক: শান্তি, শুদ্ধি, আত্মদর্শন।
শিব এই রূপে দেবতাদের শক্তি ও সাহস জোগান।
ভক্তিমূলক প্রেক্ষাপটে: শম্ভু নামেই শিব সবচেয়ে বেশি পূজিত।
10. চাঁদ
অর্থ: উজ্জ্বল, দ্যুতিময়, শীতল।
রূপ: উগ্র না হয়ে ঠান্ডা অথচ কঠোর।
প্রতীক: ক্রোধ, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত এবং সুবিন্যস্ত।
11. ভব
অর্থ: অস্তিত্বের উৎস।
রূপ: তিন গুণের অধিপতি (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ)।
প্রতীক: সৃষ্টি, পালন ও সংহার একত্রে।
ভব রূপে শিব মহাসৃষ্টির উৎস, যিনি জগতের সমস্ত কিছু ধারণ করেন।