রাখি বন্ধন
দীর্ঘকাল আগে, দ্বারকানগরে একদিন শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সুদর্শন চক্র হাতে নিয়ে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। যুদ্ধ শেষে চক্রটি নামাতে গিয়ে তাঁর আঙুলে হঠাৎ একটি তীক্ষ্ণ ক্ষত হয়, আর রক্ত ঝরতে শুরু করে।
রাজপ্রাসাদে উপস্থিত ছিলেন পাণ্ডবদের পত্নী, সতীসাধ্বী দ্রৌপদী। তিনি কৃষ্ণের এই অবস্থা দেখে গভীর ব্যথিত হলেন। কোনো দ্বিধা না করে, তিনি নিজের রঙিন শাড়ির প্রান্ত ছিঁড়ে কৃষ্ণের আঙুলে মমতায় বেঁধে দিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ সেই মুহূর্তে মৃদু হাসলেন, কিন্তু তাঁর চোখে কৃতজ্ঞতার দীপ্তি স্পষ্ট ছিল। তিনি দ্রৌপদীর দিকে তাকিয়ে বললেন —
"দ্রৌপদী, আজ তুমি শুধু আমার রক্ত থামাওনি, তুমি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেলে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি — জীবনের যে কোনো মুহূর্তে যদি তোমার বিপদ আসে, আমি তোমাকে রক্ষা করব।"
বছর কেটে গেল। ভাগ্যের খেলায় কুরুসভায় দ্রৌপদীকে অপমানের চেষ্টা হলো। অসহায় অবস্থায় তিনি ভগবান কৃষ্ণকে স্মরণ করলেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কৃষ্ণ তাঁর অসীম দৈবশক্তি দিয়ে দ্রৌপদীর বস্ত্রকে অনন্ত করে দিলেন। যতই দুঃশাসন টানতে লাগল, শাড়ি ততই দীর্ঘ হতে লাগল, আর দ্রৌপদীর সম্মান অক্ষুণ্ণ রইল।
এইভাবেই, এক ফোঁটা রক্ত আর এক টুকরো কাপড়ের বিনিময়ে জন্ম নিলো ভ্রাতা-ভগ্নীর পবিত্র বন্ধন — যা আজও রাখি বন্ধনে স্নেহ, প্রতিশ্রুতি ও রক্ষার প্রতীক হয়ে আছে।