ভৈরবী কোনো রক্তপিপাসু বা ভয়ঙ্করী নয় —
তিনি সেই চৈতন্য-শক্তি যিনি ভিতরের ভয়, অন্ধকার ও অবিদ্যা পুড়িয়ে দেন।
তাঁর সাধনা কঠিন, তবে সঠিকভাবে হলে — জীবনের সকল বাধা ও সংশয় ভস্মীভূত হয়ে যায়।
তিনি বলেন, “ভয় করো না, জাগো, তেজস্বী হও” — এটাই ভৈরবীর বাণী।
ভৈরবী শব্দটি এসেছে "ভৈরব" থেকে, যার অর্থ ভয়ংকর বা প্রলয়কারী শিব।কিন্তু তিনি কেবল ভয়ের প্রতীক নন,
বরং তিনি ভক্তদের ভয়মুক্তি ও আধ্যাত্মিক জাগরণের পথপ্রদর্শিকা। ভৈরবী হলেন ভৈরবের শক্তিস্বরূপা —
যিনি একইসাথে সৃষ্টিকর্ত্রী, সংহারকারিণী ও সর্বজ্ঞা।
ভৈরবীকে প্রায়শই দুর্গার একটি রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পৌরাণিক কাহিনীতে তিনি শিবের সঙ্গে অভিন্ন শক্তি হিসেবে উল্লিখিত। কিছু কাহিনীতে ভৈরবীকে কালীর সঙ্গেও যুক্ত করা হয়, কারণ তাঁরা উভয়েই অজ্ঞতা ও মায়ার ধ্বংসকারিণী। তবে ভৈরবীর রূপে একটি মাতৃসুলভ করুণা ও স্নেহের দিকটিও প্রকাশ পায়।
গূঢ় তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা- ভৈরবীকে বলা হয় “জ্ঞানাগ্নিদগ্ধকর্মা” — জ্ঞানের অগ্নিতে যিনি অজ্ঞান পুড়িয়ে দেন। তিনিই কুণ্ডলিনী শক্তি, যা মুলাধার থেকে উঠে সহস্রার পর্যন্ত চেতনা প্রসার করে। তিনি ভয়ংকর রূপে ভাস্বর, কিন্তু সেই ভয় হল আত্মঘাতী অজ্ঞানের জন্য।
তন্ত্রে বলা হয়—
"যা শক্তি ভৈরবীরূপেণ প্রকাশিতা সা চিদ্রূপিণী।"
অর্থাৎ, চৈতন্য যখন সক্রিয় হয়, তখন সে ভৈরবীরূপে প্রকাশ পায়।