জপ কাকে বলে ?
প্রশ্ন :- জপ কাকে বলে ?
উত্তর:- শাস্ত্রে আছে " জপাত: সিদ্ধি " - অর্থাৎ জপ দ্বারা সিদ্ধিলাভ হয় l ভগবানের কোনো নাম মন্ত্র বা গুরু মন্ত্র অনবরত বিভিন্ন ভাবে বা বিভিন্ন পদ্ধতিতে করার নাম জপ l.জপ কত প্রকার কি কি ?
উত্তর:- শাস্ত্রানুসারে জপ 11 প্রকারের পদ্ধতি দ্বারা করা যায় l
1.কায়িক জপ
2. বাচিক জপ
3. উপাংশু জপ
4. প্রাণীক জপ
5. হার্দিক জপ
6. মানসিক জপ
7. ক্রিয়া জপ
8. সুষুম্না জপ
9. চক্র জপ
10. অজপা জপ
11 পশান্তি জপ
প্রতিটি জপ পদ্ধতি পরস্পরের থেকে উন্নত l যেমন - কায়িক থেকে বাচিক , আবার বাচিক থেকে উপাংশু উন্নত - এই ভাবে প্রতিটি জপ পদ্ধতি পরস্পরের থেকে উন্নত l পশান্তি জপ পদ্ধতি পর্যন্ত একবার করতে পারলে জপ সাধনায় পূর্ণ সিদ্ধিলাভ হয় এবং শাস্ত্রের " জপাত: সিদ্ধি " কথাটি পূর্ণত্ব প্রাপ্ত হয় l
জপ সমর্পণ করার প্রয়োজনীয়তা
শাস্ত্র অনুসারে উন্নত ধার্মিক লোক কল্যাণকর ধর্মযুক্ত কর্মকেই যজ্ঞ বলে ধরা হয়, আর সেই যজ্ঞের ফল স্বরূপ গুরু ভগবান বিষ্ণুর স্থিতি স্বরূপ প্রশন্তি নাদস্তর থেকে শিষ্যের আত্মজ্ঞান বা পরম মুক্তির জন্য যে মন্ত্র নির্বাচন করে শিষ্যের অনাহত চক্রের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে দেন- আর শিষ্য সেই গুরু প্রদত্ত মন্ত্র জপ করে যদি কর্মফলদাতা ঈশ্বরকে জপ সমর্পণ না করে তাহলে সে শাস্ত্র অনুসারে চোর সমতুল্য বা চোর হয়,-- ইহাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে তৃতীয় অধ্যায় 12 শ্লোক এ বলেছেন যে:--
ইষ্টান্ ভোগান্ হি বো দেবা দাস্যন্তে যজ্ঞভাবিতাঃ।
তৈর্দত্তানপ্রদায়ৈভ্যো যো ভুঙক্তে স্তেন এব সঃ।।১২।।
অনুবাদঃ যজ্ঞের (লোককল্যাণকর ধর্মযুক্তকর্ম ) ফলে সন্তুষ্ট হয়ে কর্মফলদাতা ঈশ্বর তোমাদের মহাকল্যাণকর মুক্তিপ্রদায়িনী বাঞ্ছিত দিব্য বস্তু ( সদ্গুরুর মাধ্যমে পরমমুক্তি প্রদানকারী ইষ্টমন্ত্র ) প্রদান করবেন।
কিন্তু সেই মহাকল্যাণকর মুক্তিপ্রদায়িনী বাঞ্ছিত দিব্য প্রদত্ত বস্তু ( ইষ্টমন্ত্র ) কর্মফলদাতা ঈশ্বরকে নিবেদন না করে, সে নিশ্চয়ই চোর।
তাই প্রত্যেক ব্যক্তির গুরু প্রদত্ত দীক্ষা বা ইস্ট মন্ত্র জপ করার পর শাস্ত্র বিধি অনুসারে কর্মফলদাতা ঈশ্বরকে জপ সমর্পণ করা উচিত –তাছাড়া জপ করা জনিত কোন শুভ কর্মফল তার উদয় হয় না এবং সে চোর এ পরিণত হয়
জপ সমর্পণ পদ্ধতি
গুরু প্রদত্ত মন্ত্র আসনে বসে জপ সম্পূর্ণ করার পর ডান হাতের তালুতে জল নিয়ে নিচের মন্ত্র বলে জল মাটিতে বা কোন পূজা সম্বন্ধীয় পাত্রে ফেলতে হবে I
মন্ত্র:---- “ ওঁ নমঃ গুহ্যতি গুহ্য গোপ্তাত্বং গৃহাণাস্মৎ কৃতং জপং ।
সিদ্বি ভবতু-মে দেব ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দ্দন।।”
অর্থঃ :- হে পরম দেব, পরমপ্রিয় কর্মফলদাতা ঈশ্বর তুমি গুহ্য ও অতি গুহ্য বস্তুকে রক্ষা কর। অতএব আমার এই জপ তুমি গ্রহন কর এবং হে দেব তোমার প্রসাদে আমার সর্বসিদ্ধি লাভ হউক।
ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্রঃ- ( বুকের কাছে দুই হাত জোড় করে নমস্কার এর মতন করে বলতে হবে)
ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ ।
পূর্ণং ভবতু ত্বৎ সর্বং ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দ্দন ।।
মন্ত্র হীনং ক্রিয়া হীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন ।
যৎ পূজিতং ময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তূমে ।।
অর্থঃ- আমার উক্ত কার্যে যদি কোন আচার বাদ যাইয়া থাকে বা মাত্রা বিবর্তিত থাকে হে ভগবান তোমার অনুগ্রহে তা পূর্নত্ব প্রাপ্ত হউক।
তারপর নিচের মন্ত্রটি বলতে হবে—( বুকের কাছে দুই হাত জোড় করে নমস্কার এর মতন করে বলতে হবে)
“ ওঁ প্রীয়তাং পুন্ডরীকাক্ষ সর্বযজ্ঞঈশ্বর হরি
তস্মিন তুষ্ট জগৎ তুষ্ট প্রনিতে প্রণীতং জগৎ”
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু—-10 বার জপ করে শেষ করতে হবে