হরিতকী পূজায় লাগে কেন?
আমাদের দেশের প্রায় সমস্ত পূজা অর্চনার ক্ষেত্রে যে ফলটির নীরব উপস্থিতি সকলের চোখে পড়ে তা হল হরিতকী। শুধু সমস্ত দেবদেবীর পূজা অর্চনার ক্ষেত্রেই নয়, বিবাহাদি, তর্পণ, শ্রাদ্ধে, শ্রীশ্রীচণ্ডীপূজায় এবং অনান্য শুভ ও মাঙ্গলিক কর্মে তিল, হরিতকীর সাহায্য বিনা ক্রিয়াটি যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা হরিতকীকে প্রায় সমস্ত কর্মের ‘মঙ্গলের প্রতীক’ হিসাবে তুলে ধরেছেন। শুধু তাই নয় হরিতকী ফলকে শাস্ত্রকারেরা স্বর্ণমুদ্রার সমান হিসাবে বর্ণনা করেছেন। প্রাচীনকাল থেকে গুরু দীক্ষার দক্ষিণাস্বরূপ একটি হরিতকী দেওয়ার প্রচলন চলে আসছে। এক্ষেত্রে অবশ্য শিষ্যের অর্থের অভাব বা অন্য কোন কারণ লক্ষ্যণীয়। হরিতকীর মতো পবিত্র ফল আর নাই। একমাত্র রুদ্রাক্ষের সঙ্গেই হরিতকীর কিছুটা তুলনা করা যেতে পারে।
তবে হরিতকীতো শুধুই ‘মঙ্গলের প্রতীক’ নয় - এর নানা গুণাগুণের কথাও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে লেখা আছে। এটি হল বৈদিকযুগের শ্রেষ্ঠফল। হরিতকী স্বভাবগুনে মানুষকে শান্ত, সংযম ও পবিত্র মনোবৃত্তি গঠন করতে সহায়তা করে। এইজন্য হরিতকীর গুণের কথা বলতে গিয়ে শাস্ত্রকারেররা বলেছেন যে, ‘কদাচিৎ কূপ্যততিমাতা নেদারস্থা হরিতকী’ কিনা স্নেহশীলা মাতাও কখনও কখনও ক্রোধান্বিতা হয়ে পড়েন, কিন্তু হরিতকী কখনোই তা হয় না। তা দেহ ও মনকে সর্বদা সুখ প্রদান করে মানুষকে শুভকর্মে নিয়োজিত রাখে।
‘হরিতকী’ ফলটির নামকরনে লক্ষ্য করা যায় যে, এতে ভগবান বিষ্ণুর প্রভাব রয়েছে। এখানে ‘হরি’ শব্দ দ্বারা নারায়ণ / বিষ্ণুকে বোঝায়। আর ‘তকী’ অর্থে “ফল” হতে পারে। কাজেই হরিতকী হল হরির বা নারায়ণের প্রিয় ফল যেমন রুদ্রাক্ষকে শিবের অতি প্রিয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হরিতকী ফলকে নানা নামেও ডাকা হয়ে থাকে। যেমন অভয়া, পথ্যা, কায়স্থা, বয়স্থা, প্রাণদা, অমৃতা, পুতানা প্রভৃতি। আচার্য মহীধর হরিতকীর নানা গুণাগুণের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, কাঁচা হরিতকীর রস পান করতে হয়। এতে শরীরের ভোক্ত অন্ন শুদ্ধ হয় এবং সাত্ত্বিক মন গঠিত হয় যা মানুষকে দিব্যগুণ লাভ করতে সহায়তা করে। এখানেও দেখা যাচ্ছে যে, হরিতকী হল পবিত্রতার মূর্ত দ্রব্য। এটি সেবন করলে মানুষের বল, বীর্য, স্মৃতি ও কান্তি বৃদ্ধি পায় এবং মনে দেবভাব বর্তমান থাকে।